Header Ads

ad728
  • Breaking News

    ইবনে সিনার জীবনী


    ইবনে সিনা

    মুসলিম বিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম এক নক্ষত্রের নাম ইবনে সিনা। আরবিতে ইবনে সিনাকে আল-শায়খ আল-রাঈস তথা জ্ঞানীকুল শিরোমণি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ইউরোপে তিনি আভিসিনা (Avicenna) নামে পরিচিত, হিব্রু ভাষায় তাঁর নাম Aven Sina। আরবে তাঁর পুরো নাম আবু আলী  হোসাইন ইবনে আব্দুল্লাহ আল হাসান ইবনে আলী ইবনে সিনা। ইবনে সিনা শারাফ আল মুলক, হুজ্জাত আল হাক, শাইখ আল রাঈস ইত্যাদি নামেও পরিচিত ছিলেন।

    ইবনে সিনা ৯৮০ খ্রিস্টাব্দের (৩৭০ হিজরি) সেপ্টেম্বর মাসে উজবেকিস্তানের বিখ্যাত শহর বোখারার নিকটবর্তী আফসানা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল্লাহ এবং মাতার নাম সিতারা বিবি।

    ইবনে সিনা একাধারে অধিবিদ্যা, যুক্তিবিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান, ধর্মতত্ত্ব, দর্শনশাস্ত্র, ইতিহাস, অর্থনীতি, রাজনীতি, গণিত, জ্যামিতি, ন্যায়শাস্ত্র, ধর্মতত্ত্ব, কাব্য ও সাহিত্য শাখায় প্রচুর ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। তবে চিকিৎসা বিভাগে তাঁর  অবদান সবচেয়ে বেশি। তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক বলা হয়। 

    তাঁর চিকিৎসা শাস্ত্রে অবদান এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, প্রায় আঠারো শতকের শেষ পর্যন্ত প্রায় ৭০০ বছর ধরে তাঁর লিখিত বইগুলো অক্সফোর্ড, কেমব্রিজসহ ইউরোপের নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুরুত্বসহকারে পড়ানো হত। 
    তাঁর লেখা চিকিৎসা বিষয়ক গ্রন্থ “আল কানুন ফিল থিব” কে দীর্ঘকাল ইউরোপে চিকিৎসার ক্ষেত্রে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত করা হতো। মানবদেহের অঙ্গসংস্থান ও শরীরতত্ত্ব সন্বন্ধে তিনি যে সব তথ্য প্রদান করেছিলেন সেগুলো সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত পৃথিবীর সব দেশের চিকিৎসকেরা অনুসরণ করেছিলেন।

    বাল্যকাল থেকেই ইবনে সিনার অসাধারণ মেধার বিকাশ ঘটে। মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি পবিত্র কুরআন মুখস্ত করেন। তাঁর জন্মের কিছুকাল পরেই তাঁর বাবা তাকে জ্ঞানার্জনের জন্য বুখারায় নিয়ে যান। সেখানে তিনি ১৯ বছর অতিবাহিত করেন।

    তিনি ছিলেন জ্ঞানপিপাসু এক ব্যক্তি। তার অগণিত দিন অতিবাহিত হয়েছে ঘুম ছাড়া। ঘুমের সময় তিনি জ্ঞানচর্চায় আত্মনিয়োগ করতেন। তিনি ছিলেন একজন খাঁটি মুসলমান। তিনি কোন বিষয়ে যখন বুঝতে পারতেন না। তখন দু’রাকাত নফল নামাজ পড়ে আল্লাহ পাকের সাহায্য চাইতেন। কান্নাকাটি করে বলতেন, হে আল্লাহ তুমি আমার জ্ঞানের দরজাকে খুলে দাও। আল্লাহ পাক পরম দয়ালু। বান্দার কাতর আবেদন মঞ্জুর না করে থাকতে পারেন না। কাজেই ইবনে সিনার দোয়া কবুল হত। ইবনে সিনা যখন ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়তেন তখন অমীমাংসিত প্রশ্নগুলো তার মানসপটে স্বপ্নের মত ভাসতো। তার জ্ঞানের দরজা খুলে যেত। ঘুম থেকে উঠে তিনি সমস্যার সমাধান করে ফেলতেন। 

    এ সময় বুখারার বাদশাহ নুহ বিন মনসুর এক দুরারোগ্য ব্যাধীতে আক্রান্ত হন। দেশ এবং বিদেশের সকল চিকিৎসক এর চিকিৎসায় ব্যর্থ হয়। ততদিনে সীনার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ায় বাদশাহের দরবারে তার ডাক পড়ে। তিনি বাদশাহকে সম্পূর্ণ সারিয়ে তুলেন। তার খ্যাতি এ সময় দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। আরোগ্য লাভের পর বাদশাহ সীনাকে পুরস্কার দেয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেন। এসময় সীনা চাইলে বিপুল সম্পদ ও উচ্চপদ লাভ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি কেবল বাদশাহ্‌র কাছে শাহী কুতুবখানায় (বাদশাহ্‌র দরবারের গ্রন্থাগার) প্রবেশ করে পড়াশোনার অনুমতি প্রার্থনা করেন। বাদশাহ তার এ প্রার্থনা মঞ্জুর করেন। এভাবেই ইবন সিনা শাহী গ্রন্থাগারে প্রবেশের সুযোগ পান। গ্রন্থাগারের ভিতরে যেয়ে অবাক হয়েছিলেন সিনা। কারণ এমন সব বইয়ের সন্ধান তিনি সেখানে পেয়েছিলেন যেগুলো এর আগেও কোনদিন দেখেননি এবং এর পরেও কখনও দেখেননি। 
    প্রাচীন থেকে শুরু করে সকল লেখকদের বইয়ের অমূল্য ভাণ্ডার ছিল এই গ্রন্থাগার। সব লেখকের নাম তাদের রচনাসমূহের বিস্তারিত বর্ণনা তৈরির পর তিনি সেগুলো অধ্যয়ন করতে শুরু করেন। এমনই পাগল হয়ে গিয়েছিলেন যে, নাওয়া-খাওয়ার কথা তার মনেই থাকত না। মাত্র অল্প কয়েকদিনে তিনি অসীম ধৈর্য ও একাগ্রতার সাথে কুতুবখানার সব কিতাব মুখস্ত করে ফেলেন।


    অন্য এক সময় বুখারার সুলতান মাহমুদ এক কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ায় বহু নামকরা চিকিৎসক আসেন তাঁকে চিকিৎসা করতে। কেউ পারলেন না তাঁর রোগ নির্ণয় করতে। এ মুহূর্তে তরুণ ইবনে সিনা সেচ্ছায় রাজ দরবারে গিয়ে রাজার চিকিৎসার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করেন। সহসাই তিনি অনুমতি পেলেন। ইবনে সিনার চিকিৎসার গুণে অতি অল্পদিনের মধ্যে সুলতান আরোগ্য লাভ করলেন। সুলতানও তাঁর প্রতি খুশী হলেন এবং চাইলেন তাঁকে পুরস্কৃত করতে। এ সময় ইবনে সিনা সুলতানের প্রিয় এক বিরাট গ্রন্থাগারে এসে পড়াশোনা করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেন। বরং সুলতান তাঁর উপর সমগ্র গ্রন্থাগারের ভার অর্পণ করলেন।
    হঠাৎ একদিন এই গ্রন্থাগারে আগুন লেগে সমস্ত বই নষ্ট হয়ে যায়। বিরোধীরা সুলতানের নিকট প্রকাশ করলেন এটি ইবনে সিনার কাজ। তারা বললেন, ইবনে সিনা বইগুলো কন্ঠস্থ করে নিয়ে ইচ্ছে করেই আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। কানপাতলা সুলতান এ কথায় বিশ্বাস স্থাপন করলেন। এবং ইবনে সিনাকে বিতাড়িত করলেন। পরবর্তীতে সুলতান মাহমুদ তার ভুল বুঝতে পেরে ইবনে সিনাকে ফিরিয়ে আনার বহু প্রচেষ্টা চালান কিন্তু ইবনে সিনা কোন মতেই ফিরে আসেন নি।

    ২১ বছর বয়সে ইবনে সিনা আল মুজমুয়া নামে একটি বিশ্ব কোষ রচনা করেন। এতে তিনি গণিত ছাড়া সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি আশ শিফা নামক একটি গ্রন্থ লিখেন। 
    আশ শিফা দর্শন শাস্ত্রের একটি অমূল্য গ্রন্থ। এটি ২০ খন্ডে বিভক্ত। এতে রাজনীতি, অর্থনীতি, প্রাণীতত্ত্ব ও উদ্ভিদতত্ত্ব সহ যাবতীয় বিষয়কে অন্তর্ভুক করা হয়েছে।
    ইবনে সিনা পদার্থ বিজ্ঞঅন, দর্শন, ধর্মতত্ত্ব, জ্যামিতি, গনিত, চিকিৎসা বিজ্ঞান, সাহিত্য প্রভৃতি বিষয়ে প্রায় শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি মানুষের কল্যাণ ও জ্ঞান বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য আজীবন পরিশ্রম করেন। জ্ঞানের সন্ধানে বহু জায়গা ভ্রমন করেছেন।

    ইবনে সিনা-ই প্রথম মেনেনজাইটিস রোগটি সনাক্ত করেন। পানি ও ভূমির মাধ্যমে যেসব রোগ ছড়ায় সেগুলো তিনি আবিস্কার করেন। সময়ও গতির মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কের কথা তিনিই প্রথম আবিস্কার করেন।


    জ্ঞান-বিজ্ঞানের গুরু এই মহান মনীষী ১০৩৭ খ্রিস্টাব্দে (৪২৮ হিজরী) ইরানের হামাদানে মৃত্যুবরণ করেন। হামাদানে তাকে সমাহিত করা হয়।

    1 টি মন্তব্য:

    Post Top Ad

    ad728

    Post Bottom Ad

    ad728