Header Ads

ad728
  • Breaking News

    আব্রাহাম লিংকনের জীবনী

    আব্রাহাম লিংকন  (Abraham Lincoln)

    আব্রাহাম লিংকন একটি কালজয়ী ব্যক্তিত্বের নাম। পৃথিবীর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যাঁরা সংগ্রাম করেছেন, তিনি তাঁদের অন্যতম।

    আব্রাহাম লিংকন ১৮০৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ৪ তারিখে আমেরিকার কেনটাকি প্রদেশের একটি ছোট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম টমাস লিংকন।

    টমাস লিংকন ছিলেন একজন ছুতোর মিস্ত্রি। আব্রাহাম লিংকনের বাল্যকাল ছিল খুবই দরিদ্রের। বাল্যকাল তিনি মা বাবার সাথে জঙ্গলে ঘর বেঁধে কাটিয়েছেন। ছয় বছর বয়সে তিনি তাঁর মাকে হারান। উল্লেখ্য যে, তাঁর মা চিকিৎসার অভাবে মারা যায়। তাঁর মায়ের মৃত্যুর এক বছর পর তাঁর বাবা এক বিধবা নারীকে বিয়ে করেন। আব্রাহাম লিংকন তাঁর সৎমায়ের দ্বারা শিক্ষাগ্রহণে অনুপ্রাণিত হন। কিন্তু খুবই অবাক করা বিষয় হলো যে, তাঁর শিক্ষাগ্রহণের সময়কাল ১ বছরের বেশি নয়।

    আব্রাহাম লিংকন ছিলেন খুবই সাহসী ও কর্মঠ। সত্যবাদীতা, সততা, সহযোগীতা মূলক মনোভাব, মধুর আচরণ ছিল তার নিত্যসঙ্গী।

    ১৯ বছর বয়সে ব্যবসায়িক কাজে তাঁকে নিউ অর্লিয়েন্স বন্দরে যেতে হয়। ঐ ব্যবসায় তিনি প্রচুর লাভ করায় তাঁর মালিক খুশি হয়ে তাঁকে মালিকের গুদামের ম্যানেজার পদে নিযুক্ত করে। সেখানে তিনি অবসর সময়ে বিভিন্ন বই পড়তেন। আর সেখান থেকেই তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়।

    তিনি স্বাভাবিকভাবে রাজনীতির দিকে ঝুঁকে পড়েন এবং জীবনে প্রথমবারের মতো ইলিনয় প্রদেশের প্রাদেশিক নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে যোগদান করেন। রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবে প্রথমবার পরাজয় বরণ করলেও দ্বিতীয়বার (১৮৩৪সালে) জয়ী হন।

    নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে তাকে ইলিনয়ে যেতে হয়। কিন্তু পরিচিত মানুষের অভাবে তার অবসর সময়টুকু কাটত বইয়ের সাথে।

    তিনি আইন শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন এবং ১৮৩৬ সালে সফলতার সাথে আইন পাশ করেন। তিনি অতি কৃতিত্ব ও সততার সহিত ওকালতিতে খ্যাতি অর্জন করেন। কিন্তু এই কাজে তিনি বেশিদিন মনোনিবেশ করতে পারলেন না। রাজনীতিতে তিনি আসক্ত হয়ে পড়েন।

    ১৮৩৮-১৮৪০ সালে পরপর দুবার তিনি ব্যবস্থাপক সভার সভ্য হিসেবে নির্বাচিত হলেন। এরপর ১৮৪২ সালের ৪ ই নভেম্বর তিনি মেরি টড নামক জনৈক মহিলাকে বিয়ে করেন। আব্রাহাম ৪ সন্তানের জনক। তাঁর ৪ সন্তানের নাম হলো- 
    রবার্ট টড লিংকন, এডওয়ার্ড বেকার লিংকন উইলি লিংকন এবং টেড লিংকন।

    স্ত্রী মেরীর অনুপ্রেরণায়  লিংকন আবার রাজনীতির মাঠে নেমে পড়েন এবং ১৮৪৭ সালে তিনি আমেরিকার ওয়াশিংটন পার্লামেন্টের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি লক্ষ করলেন রাষ্ট্রপতির বাস ভবন হোয়াইট হাউসের কাছেই দাস-দাসী বেচা-কেনা হতো। তিনি আজীবন এ প্রথার বিরোধিতা করেছেন। সংসদে তিনি এই প্রথা বাতিলের জন্য বক্তব্য উপস্থাপন করলে বিতর্কিত হন এবং ব্যর্থ হন।

    অবশেষে ১৯৫৪ সালে তাঁর নেতৃত্বে রিপাবলিকান পার্টি গঠিত হয়। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল ডেমোক্রেসি পার্টির ডগলাস। লিংকনের রাজনৈতিক পার্টির বৈশিষ্ট্য ও কর্মনীতি মানুষকে মুগ্ধ করে। ফলে ১৯৬১ সালের মার্চ মাসের নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টি জয়লাভ করে এবং আব্রাহাম লিংকন হন আমেরিকার ১৬তম প্রেসিডেন্ট।

    প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তিনি তার লক্ষ্য জয় করতে দেরী করেন নি। দাস প্রথা বিলুপ্তের জন্য তিনি মানুষের প্রতি আহ্বান জানান।

    ১৯৬৩ সালের ১লা জানুয়ারী তিনি আইনত দাসপ্রথা বিলুপ্ত করেন। কিন্তু দক্ষিণ আমেরিকানরা তা মেনে নিতে পারে নি। তাঁরা বিভক্ত হয়ে আলাদা রাষ্ট্র গঠন করে আমেরিকাকে বিভক্ত করে। পরবর্তীতে এই অভ্যন্তরীণ বিরোধ গৃহযুদ্ধের সূচনা করে।

    ওই বছরের ১-৩ জুলাই তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসেলভানিয়ার গেটিসবার্গে  এই গৃহযুদ্ধে প্রায় আট হাজার মানুষ নিহত হয়। তাদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে যুদ্ধের প্রায় চার মাস পর ১৯ নভেম্বর ১৮৬৩ সালে এক স্মরণসভায় আব্রাহাম  একটি সংক্ষিপ্ত ও দুনিয়া কাঁপানো ভাষণ দেন। মাত্র দুই মিনিটে ২৭২ শব্দের এই বিখ্যাত ভাষণটি গেটিসবার্গ স্পীচ (GETTYSBURG SPEECH) নামে পরিচিত। এটি পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ।

    এই ভাষণের সবচেয়ে লক্ষণীয় দিক হলো মাত্র একটি বাক্যে গণতন্ত্রের নিখুঁত সংজ্ঞা দিয়েছেন লিংকন। তার ভাষ্যমতে, ‘গণতন্ত্র হলো জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা সরকার, জনগণের জন্য সরকার’। তার এই ভাষণ পরবর্তী সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাঠ্যবইয়ে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।

    ১৮৬৩ সালের ওই দিন প্রচলিত নিয়মে অনুষ্ঠানের মূল বক্তা ছিলেন তৎকালীন প্রখ্যাত বাগ্মী অ্যাডওয়ার্ড এভার্ট। তিনি প্রায় দুই ঘণ্টা বক্তৃতা করেন। পরবর্তী সময়ে লিংকন বক্তৃতা মঞ্চে দাঁড়িয়ে মাত্র ২ মিনিট বক্তৃতা করেন।

    পরবর্তী সময়ে সেই অনুষ্ঠানের মূল বক্তা অ্যাডওয়ার্ড এভার্ট দুঃখ করে বলেন, ‘আমি যদি আমার দুই ঘণ্টার বক্তৃতায় লিংকনের দুই মিনিটের বক্তৃতার মূল কথার কাছাকাছি কিছু বলতে পারতাম, তাহলে জীবন ধন্য হতো।’

    যুদ্ধে আব্রাহাম বহু ত্যাগের বিনিময়ে দীর্ঘ ৫ বছর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে জয়লাভ করেন। তাঁর এই কৃতকর্মের জন্য তিনি সর্বসাধারণের নিকট খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেন। সকলেই তাকে নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

    তাঁকে অভিন্দন জানাতে হাজারো জনতা থিয়েটারে ভীড় জমায়। রাতে আব্রাহাম স্ত্রী মেরী ও সন্তানদের নিয়ে থিয়েটারে আসে এবং নিজের আসন গ্রহণ করেন। ঐ থিয়েটারেই জন উইকস বোথ নামের এক রাজনৈতিক কর্মীর দ্বারা আব্রাহাম গুলিবিদ্ধ হন। ৯ ঘন্টা ধরে তিনি অজ্ঞান ছিলেন এবং অজ্ঞান অবস্থায় ১৮৬৫ সালের ১৫ ই এপ্রিল ইতিহাসের এই মহান মনীষী পরলোকে গমন করেন। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল ৫৬ বছর। ইলিনয়ের স্প্রীংফিল্ডে তাঁর সমাধি হয়।

    আব্রাহাম লিংকন তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় মানবতার কল্যাণে ব্যয় করেন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও দাসপ্রথা বিলুপ্ত করতে গিয়ে তিনি তাঁর প্রাণ হারান। মানবদরদী এই মহান নেতা মানুষের স্মৃতিপটে আজীবন অমর হয়ে বেঁচে থাকবেন।

    ৩টি মন্তব্য:

    Post Top Ad

    ad728

    Post Bottom Ad

    ad728